সাগরের গল্প
“আরে ভাই ইউক্রেন যুদ্ধ ব্যাবসার বাম্বু মাইরা দিছে, কাগজের দাম ছয় থেইকে আট গুন বাড়সে। কালির দাম, প্লেটের দাম সব বাড়তি। আমরা কি করুম? বইয়ের দাম তো বাড়বোই। তয় ভাইজান দারুন জিনিষ লেইখালাইছেন, এইসব সাব্জেক্টই লোকজন খুঁজে। আজাইররা প্রেম পিরিতির ভাত নাই এখন। আপনের বই চলবো। আপনার বইয়ের কাগজ ফার্স্ট ক্লাস, আর কভার দ্যাখছেননি, প্রচ্ছদটা ঝাক্কাস। গোটা মলাট আরো দারুন। বহুত দুর থেইকাও আলাদা কইরা দেখা যায়, কাষ্টামার আইসা কইবো, ‘ওই বইটা দ্যান তো, লাইরা-চাইরা দেহি।’ তারপর প্রথম চ্যাপ্টার পইড়াই ফিদা হইয়া যাইবো। কিনবোই।”
“তাই নাকি?” সিনিয়র স্টাফ অবাক, “হেভ্ভী জিনিষ হইছে। গর্জিয়াছ্। এই পৌনে এক কেজি ওজনের বই বাংলা একাডেমীর একুশে বইমেলায় ফ্লাই করবো ইনশা আল্লাহ্।”
আমি লেখক নই, পাঠক। জীবনে এত কিছু পড়েছি যে বলে শেষ করতে পারবোনা। বই অথবা সাহিত্য না বলে “এত কিছু” বললাম কেন? আচ্ছা উদাহরণ দিই, আমি কোথাও কোন লেখা দেখলে পড়তাম। যেমন রাস্তায় পড়ে থাকা ছেঁড়া কাগজ।প্রত্যেকটা পণ্যের লেবেল পড়তাম। গ্লুকোজ বিস্কুটের গোলাপী মোড়কে, সিগারেটের বাক্সে, বিড়ির প্যাকেট, বয়ুমের লেবেলে, মুড়ির ঢোঙ্গায়, সাইনবোর্ডে, রিকশা, বেবীট্যাক্সি, বাস বা ট্রাকের সামনে, পেছনে। সিনেমার পোষ্টারে, দেয়ালের চিকা, ঢাকা গেলে রিকশায় বা জোর করে হাতে গুঁজে দেওয়া ‘জীবনের শেষ চিকিৎসা’র’ লিফলেট। পত্রিকা বা ম্যাগাজিনের বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে প্রিন্টার্স লাইন। লেখা হইলেই হইলো, পড়ে ফেলতাম। এমন কি যখন আমাদের ফেনী পাইলট হাই স্কুল বা ফেনী কলেজে মেট্রিক-ইন্টার বা ডিগ্রী পরীক্ষার সেন্টার পড়তো, পরীক্ষা শেষে এখানে ওখানে পড়ে থাকা নকল তুলে তুলে পড়তাম। নানান ডিজাইনের নকল, কত্তো রকমের হাতের লেখা, কি যে ভালো লাগতো! একটা নকলে সেন্টের মিষ্টি গন্ধ পেয়েছিলাম, কি সুন্দর গোটা গোটা হাতের লেখা! চিকন লম্বা সাদা কাগজ, পরতে পরতে ছোট ছোট ভাঁজ করে কোনা কেটে এমন ভাবে সাজানো, হাতের তালুতে লুকিয়ে আরামে উত্তর লেখা যাবে। এটা নিশ্চই কলেজের কোন আপুর লেখা, নাইলে সেন্টের গন্ধ থাকবে কেন? ওরেব্বাবা, সাথে লাভ চিহ্নও আছে! ভালোবাসা মেশানো নকল। নীল কালিতে লেখা। তখন ইকোনো কলমে বাজার সয়লাব। লেখার শুরু এবং শেষে দুটো করে ছোট ছোট লাভ চিহ্ন আঁকা। সেন্টের গন্ধ মেশানো, লাভ চিহ্নওয়ালা পাতলা চিকন সাদা কাগজে নীল কালিতে কোনও এক আমলের ইতিহাস, সন, সরকার পদ্ধতি এসবের অল্প বিস্তর ছিলো, যেখান থেকে ক্লু নিয়ে ওই আপু ভালোমত উত্তর লিখবেন। বুদ্ধিমতী আপু। আমি না জেনে না শুনে কল্পনার সেই স্মার্ট নকল-লেখিকা আপুর প্রেমে পড়ে একেবারে পাগলপারা। তখন বড় হয়ে গেছি, অনেক বড়। ক্লাস টেনে পড়ি, সামনে মেট্রিক দেবো। শয়নে, স্বপনে, জাগরনে ওই আপুকে ভাবি। কল্পনার আপুটি ফর্সা, নীল ড্রেস পরা, ঠোটে লাল লিপস্টিক, চোখে কাজল, স্বাস্থ্য ভালো। শুকনা হাড্ডিগুড্ডিওয়ালা মেয়ে দেখলে মাডগার্ড, গদি আর হুড ছাড়া রিকশার মত লাগে। গতরে গোস্তো না থাকলে নারী কিসের? সমবয়েসী আর জুনিয়র মেয়েগুলারে চোখে লাগেনা, সিনিয়র মানেই ভালোবাসা। পৃথিবীর সকল সুগন্ধ সিনিয়র আপুদের মাঝে।
✽ ✽ ✽ ✽ ✽ ✽ ✽ ✽ ✽ ✽ ✽ ✽
লেখতেছিলাম বইয়ের কথা, প্রকাশনার কথা।
আবার আসি বইয়ের প্রসঙ্গে। আমি লেখক না, একটা বই লিখে বিরাট কোনো হনূ হয়ে যাই নি। কিন্তু আমি পাঠক। খুব ভালো পাঠক, ভালো লেখা বুঝতে পারি।ভালো লেখা পড়তে ভালোবাসি। হোক সেটা বাংলায়, ইংরেজীতে কিংবা অনূবাদে। রাজ্যের টুকরা-টাকরা পড়ে ক্ষান্ত থাকিনি। পড়েছি, সব ধরনের বই’ই পড়েছি।বাসার বইয়ের আলমারী গুলোতে আর বুক-শেল্ফে দুনিয়ার বই থাকতো। সেই পাকিস্তান আমলের বই, ইন্ডিয়ান রাইটারদের বই সেই আদি থেকে আধুনিক, দস্যু বনহুর, কুয়াশা, মাসুদ রানা, ওয়েষ্টার্ণ আর অনুবাদসহ সেবা প্রকাশনীর বিশাল ভান্ডার, সাথে ওদের রহস্য পত্রিকা। সোভিয়েত আমলের রাশানদের মোটা মোটা বই, চায়নীজদের বই। ওগুলো কমিউনিষ্ট বিপ্লবের। পশ্চিমাদের বই, সেখানে থাকতো কমিউনিজমের দুঃখ, বদনাম আর চোখ ধাঁধানো পশ্চিমা আধুণিকতা। তার পাশাপাশি ইসলামী বিপ্লবের বই। ইরানীদের এক রকম বিপ্লব, প্যালেষ্টাইনিদের ইসরায়েল বিরোধী বিপ্লব, সিরিয়া-লেবাননের হিজবুল্লাহ্ বিপ্লব, মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশগুলো যাদের সাথে আমেরিকানদের লদকালদকি তাদের আরেকরকম ইসলামী বিপ্লবের বই। কিংবা ম্যাগাজিন। এর পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে চলতো দেশের দৈনিক পত্রিকা আর দুনিয়ার সব ম্যাগাজিন। তখন সবাই খালি ইত্তেফাক পড়তো, আব্বুও। আর পড়তো অবজারভার। অবজারভারের ইংলিশ কেমন জানি, মনে হত কে যেন আমার মাথায় ঝুনা নারকেল দিয়ে বাড়ি মারছে। অথচ টাইম ম্যাগাজিন পড়তে কষ্ট হতনা। আব্বু দেশী-বিদেশী ম্যাগাজিনও রাখতো, তার মধ্যে বেশী মনে পড়ে বিচিত্রার কথা। আম্মার জন্য নিয়মিত বরাদ্দ ছিলো পূর্বানী আর চিত্রালী, সাথে বেগম পত্রিকা। ওগুলোও পড়তাম। মেয়েদের পত্রিকাতো আগে পুরুষদেরই পড়া উচিত তাই না? পূর্বাণী বা চিত্রালীর পৃষ্ঠা জুড়ে সে আমলের বাংলা সিনেমার নায়িকাদের বড় বড় রঙ্গীন ছবি দেখতে কি যে ভালো লাগতো! যখন সিক্স-সেভেনে পড়তাম, মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম বড় হলে ববিতাকে বিয়ে করবো।
আমি বড় হতে হতে ববিতা অনেক বেশী বড় হয়ে গেলো। সে আমলে এখনকার মত ওষুধপত্র, পেলাষ্টিক ইত্যাদি ছিলোনা। এখন মাশাল্লাহ বয়স লক্ করা যায়। তখন যেতো না। তাই ববিতা বাদ। ক্লাস এইটে উঠে বিশাল এক সাহিত্য আবিষ্কার করলাম। আমাদের স্কুল থেকে দুলাল সিনেমা হল এইতো কাছে, একছুটে চলে যাওয়া যায়। সেখান থেকে বিশেষ বই কেনা শুরু হল। একজন ওপার বাংলার লেখক অত্যন্ত ভালো বিষয়ের বই লিখতেন যার মান ভালো, দামে কম। আমরা বন্ধুরা আট আনা, এক টাকা একসাথ করে দুই/আড়াই টাকা জমলেই যে কোন একজন এক ছুটে দুলাল সিনেমার সামনের দোকানগুলো থেকে এই বিশেষ বই কিনে এনে সবাই ভাগেযোগে পড়তাম আর সেই মহান লেখকের প্রতি নানান ভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতাম। সমস্যা হচ্ছে শিক্ষামূলক এবং চরম বিনোদনমূলক এই বইগুলো স্কুলে হারাম ছিলো। প্রথমে একজন ধরা পড়লো বুলেট স্যারের হাতে। দিত্বীয় দফায় খুরশীদ স্যারের হাতে ধরা পড়ে বই সহ আরেক জন যেভাবে ভোঁ দৌড় দিলো, সে এক ইতিহাস। তৃতীয় জন ধরা পড়লো সন্তোষ স্যারের হাতে, প্রমাণ সহ। তারপর থেকে সাহিত্যের এই জগত থেকে বাধ্যতামূলক বিদায় নিতে হল।
যাই হোক, এত বিষয়ে বইপত্র পড়তে পড়তে আমার মাথা ঘুন্ডি দোকান হয়ে গেলো। ফেনী-নোয়াখালীর ভাষায় ঝুপড়ি টাইপের দোকান গুলোকে ঘুন্ডি দোকান বলে যেখানে সব পাওয়া যায়। ঘুন্ডি দোকানে যেমন সুন্দর করে বানানো ঘুন্ডি ঝুলে, সাথে চা, বিস্কুট, কলা, লোফ (স্থানীয় ভাষায় হাবারুডি, গেরাইম্মারা শুদ্ধ ভাষায় বলে পাউরুটি), পান, সুপারি, জর্দা, সাদাপাতা, বিড়ি, সিগারেট, মিছ্রি, চকলেট, চুইংগাম, লাড্ডু, মোয়া, নিমকসোলেমানী, বার্মাইয়া আচার, তেঁতুল, তেঁতুলের আচার, আমছি, সুঁই, সুতা, বইখাতা সেলাইয়ের সুঁই-সুতা, কায়েদা, আমপারা, নামতার বই, কাঠের হাতলওয়ালা পকেট ছুরি, তালাচাবি, নেইল কাটার, পঞ্জিকা, লুডু, ক্যারাম খেলার গুটি, বরিক পাউডার, কলম, আলপিন, ছুটা কাগজ, দাঁতের খিলাইল (তখনও টুথপিক আবিষ্কার হয় নি), কান খুচকী, নারকেল তেল, জবাকুসুম তেল, ম্যানোলা কোল্ড ক্রীম, ভ্যানিসিং ক্রীম, তিব্বত স্নো, মাইসিল ঘামাচি পাউডার, ইসলাম ভাইয়ের চাবি মার্কা দাঁতের মাজন, সাধনা ঔষধালয়ের দাঁতের মাজন ‘দন্তরোগারী’, চায়নীজ রেজার, বলাকা ব্লেড, রাজা কনডম, সাদা কনডম (দুই নম্বর, টাকায় চাইরটা), মায়া বড়ি, ওভাকন, বনানী লোম নাশক আরো দুনিয়ার জিনিষ। ছোট্ট একটা ঘুন্ডি দোকান অথচ ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের মত সব আছে। বিশেষ দ্রষ্টব্য: ফেনীর মানুষ ঘুন্ডিকে ফাজিলের মত ঘুড়ি বললে অফেন্সিভ হয়ে যায়। সাবধান।
একই অবস্থা আমার ব্রেনের। ছোট্ট মাথায় সব আছে, ওই ঘুন্ডি দোকানের মত। এত রকমের জিনিষ পড়েছি যে ঘুন্ডি দোকান মস্তিষ্ক নিয়ে যখন হাঁটাচলা করি তখনমাথার মধ্যে দুনিয়ার আইটেম খিচুড়ী পাকাতে থাকে। এত্তোসব আইটেম থেকে আমার সী-লাইফের অভিজ্ঞতাকে আলাদা ভাবে তুলে ধরতে গিয়ে চরম চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ি। আমার মাথার তখন ঝুনঝুন অবস্থা। এই ঝুনঝুন চ্যালেঞ্জকে জয় করে সমুদ্র জীবনের প্রথম অধ্যায়ের প্রতি ফোকাস করতে গিয়ে প্রায় আধামরা হয়ে গিয়েছিলাম। পাক্কা আড়াই বছর লেগেছে বই লিখতে। নাইলে বই একটা লিখতে এত্তো সময় লাগে?
তারপরও, লিখে ফেললাম। বই ছাপা হল। প্রায় আশি হাজার শব্দের একটা হোঁৎকাপটাশ বই। অনন্যা প্রকাশনী ছেপে দিয়েছে। পুরো উপন্যাসের ওয়ার্ড প্রসেসিং করেছি আমি। সেখানে প্রচুর ছবি, ম্যাপ আর স্কেচ আছে। এগুলো দেয়ার কারনে পাঠকেরা বইয়ের সাথে নিজেকে জড়াতে পেরেছে। আমার সৌভাগ্য প্রথম সুযোগে ভিয়েতনাম থাকা হয়েছে প্রায় দুই মাস। উত্তর আর দক্ষিন ভিয়েতনাম যতখানি সম্ভব দেখেছি। আমাদের বাংলাদেশের বিশাল জনগোষ্ঠী ভিয়েতনামিজদের ভালোবাসে, সম্মান করে। তিরিশ বছরেরও বেশী সময় ধরে যুদ্ধ করে, প্রচুর রক্ত দিয়ে, শেষে আমেরিকান সুপার পাওয়ারকে চরমভাবে পর্যুদস্ত করে ভিয়েতনাম ছাড়া করেছে এবং দেশকে হানাদার মুক্ত করেছে। এই বিষয়টাও যতখানি পেরেছি বইয়ে উল্লেখ করে প্রচুর ছবি আর ম্যাপ সংযোজন করেছি। একইভাবে প্রাচীন ইসলামী সভ্যতার রেফারেন্স দেখাতে পেরেছি, মিশরের সিনাই উপকূল, জর্ডানের আক্বাবা এবং মিশর থেকে কেড়ে নেয়া আজকের ইসরায়েলের নেগেভ আর এলাট এলাকার ছবি ম্যাপ এবং ঐতিহাসিক প্রসঙ্গ এনে। সেখান থেকে দুনিয়ার অর্ধেকেরও বেশী পেরিয়ে থাইল্যান্ড, মালয়শিয়া হয়ে চীনের মহাপ্রাচীর দেখা। কোরিয়ায় যাবার পথে ভয়াবহ টাইফুনের পাল্লায় পড়া এবং দ: কোরিয়ার ঈর্ষনীয়, চোখ ধাঁধানো উন্নতি এবং তাদের কালচার, সব কিছু তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
যেমনটা আগে বলেছি, পুরো বইটা ওয়ার্ডপ্রসেসিং করে রেডি করে দেখি শক্তপোক্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন ছাপাবো কোথায়? মনে সুপ্ত বাসনা ছিলো অনন্যাকে দিয়ে ছাপাবো কারন ওরা ড. হুমায়ুন আহমেদের সর্বাধিক বই ছেপেছে, সারা দেশের মানুষ অনন্যাকে চেনে। তাছাড়া আরেকটা বিষয় হল অনন্যাকে সফট্ কপি দিয়ে দিলে ছাপানোর সময় সুপারভাইজ করতে হবে না। ওরা অনেক পুরোনো এবং প্রফেশনাল। যোগাযোগ করার পর দেখি উনি আমার মামা বিশিষ্ট সাংবাদিক আকবর হায়দার কিরনের জানে-জিগার বন্ধু। কেমনে কি? উনাকে পান্ডুলিপি পাঠালাম, বললেন, “পড়ে দেখি”। পরদিন বললেন, “আটত্রিশ ফর্মার বই, এত কি লেখসো? এটা আমি ছাপাবো।” মনে মনে বলি, আটত্রিশ ফর্মা কি জিনিষ? বই ছাপানো নিয়ে আমি যত রকমের নকশা করেছি তিনি মেনে নিলেন। শুধু তাই নয় আমার বিশেষ অনুরোধ ছিলো বইটা যেন গতাণুগতিকের চেয়ে বড় রয়েল সাইজ ডিসি (Royal size double crown) হয়। তিনি বললেন, “আচ্ছা”। আবার বললাম প্রচ্ছদ আমি বানাবো। তিনি বললেন, “আচ্ছা”। আমি বললাম, “প্রচ্ছদে লেখকের নাম বড় হবে, উপরে হবে, বইয়ের নাম হবে নীচে।” তিনি বললেন, “এইটা কেমন উল্টা কথা?” আমি মনে মনে জেদ ধরে বসে আছি, লেখতে লেখতে আঙ্গুল বেঁটে করে ফেললাম এখন বলে এইটা কেমন কথা? আমি আগে না বই আগে? শেষমেষ বললেন, “আচ্ছা”। তারপর বললাম, “আমি চাই আমার বই লিট ফেস্টে যাবে।” তিনি শব্দ করে হেসে ফেললেন। বললেন, “আচ্ছা আচ্ছা, জানুয়ারীর ৫ তারিখে বাংলা এ্যাকাডেমীতে ইনটারন্যাশণাল লিটফেস্ট শুরু হবে, আমরা সব সময় লিটফেস্টে থাকি, সেখানে তোমার বই যাবে।” লিটফেস্ট হচ্ছে লিটারেচার ফেস্টিভালের সংক্ষেপ। প্রতিবছরের একদম শেষে বা বছরের শুরুতে বাংলা একাডেমীতে এই বিশেষ এবং গুরুগম্ভীর সাহিত্য উৎসব হয় যেখানে দেশের সাহিত্যানুরাগী, লেখক, কবি, আঁতেল বৃন্দ, বিদেশী লেখক, নোবেল লরিয়েট, টপ লিষ্টেড পাবলিশার্স, প্রচুর বিদেশী পাবলিশার্স ইত্যাদি আসে। তবে ওখানে গরু বাজার বসেনা কারন আগে থেকে রেজিস্ট্রেশন করে যেতে হয় এবং সিরিয়াস লোকজন সেখানে যায়।
২০২২ সালের সেপ্টেম্বর/অক্টোবর মাসের চরম ডলার সংকট বাংলাদেশের সকল শ্রেণী ব্যাবসায়ীদেরকে বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলে দেয়। অনন্যা প্রকাশনী সহ বাংলা বাজারের অনেক গুলো প্রকাশনা সংস্থা সরাসরি বলে দেয় তারা ২০২৩ এর বইমেলায় অংশ নেবেনা। দেশের পেপার মিল গুলোকে অকেজো করে রাখা হয়েছে অনেক আগে থেকে তাই দেশে কাগজ নেই। এখন ডলার নেই, কোন ব্যাংক এলসি খুলছেনা। বিদেশ থেকে কাগজ আনবে কেমনে? বইমেলা সামনে রেখে সকল প্রকাশনা সংস্থা, তাদের প্রেসগুলো প্রচন্ড বিজি হয়ে যাবে অক্টোবর মাস থেকে। সেখানে বাজারে কাগজের দাম বেড়েছে গতানূগতিকের তুলনায় ছয় গুন যা পরে প্রায় আটগুন পর্যন্ত বেড়েছে। বেশী টাকা দিয়েও প্রকাশকেরা কাগজ পাচ্ছেনা বই ছাপাবে কোত্থেকে? বিষয়টা প্রধানমন্ত্রীর কানে গেলে তিনি নড়েচড়ে বসেন, শেষমেষ দাম অনেক হলেও প্রকাশকেরা কাগজ হাতে পেলো। প্রকাশকেরা বইয়ের দাম বাড়াতে বাধ্য হল এবং আমার বইয়ের দাম প্রাথমিকভাবে ধরা হল পনেরো শ’ টাকা। আমি বাধ সাধলাম, এই দামে কেউ হুমায়ুন আহমেরদের বইও কিনবে না। আমি কোথাকার কোন নয়া মাল? প্রকাশক মহোদয় দয়া করলেন, তিনি প্রফিট মার্জিন মাটিতে নামিয়ে বইয়ের গায়ের দাম ধরলেন এক হাজার টাকা, যার বিক্রয় মূল্য হবে সাত শ’ টাকা। এখানে বলে রাখা প্রয়োজন বাংলাদেশের বই বানিজ্যে এই কালচার বহু পুরোনো, আমরাও সব সময় পনেরো থেকে পয়ত্রিশ পার্সেন্ট পর্যন্ত ডিসকাউন্ট দিয়ে বই কিনেছি। এখন প্রশ্ন হল, সাত শ’ টাক দিয়েও কেউ কি নতুন এই অখ্যাত লেখকের বই কিনবে? আমি জানিনা।
দুই সপ্তাহের মধ্যে বিক্রী হয়ে গেলো প্রায় দেড়’ শ কপি। এখন বইমেলার অপেক্ষা. . .
Awesome writing on your book publishing feeling.
Thank you.