দশ হাজার অগ্নিশিখা

 

২০২০ সাল। এ বছর প্রথম মহাযুদ্ধের শতবর্ষ পূর্ণ হল।

যুদ্ধে যারা প্রান দিয়েছে তাদের স্মরণে দশ হাজার মশাল জ্বালিয়ে নিহতদের প্রতি সম্মান জানাছে বৃটেন।

 

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয় ১৯১৪ সালে, শেষ হয় ১৯১৮ সালে যেখানে প্রান দিয়েছে সাত লাখ বৃটিশ সেনা। ২০১৮-তে, এই ভয়াবহ যুদ্ধের একশত বছর পর লন্ডনের টাওয়ার অফ লন্ডনের বাইরের পরিখায় (Moat) প্রজ্জ্বলিত হয়েছে দশ হাজার মশাল। প্রথমে মশাল জ্বালিয়ে উদ্বোধন করে রাজকীয় টাওয়ার গার্ড ‘ইয়োম্যান ওয়ার্ডার’-রা। তারপর ক্যাডেট আর ট্রেইনড্ ভলন্টিয়াররা প্রায় এক ঘন্টা ধরে একে একে সবগুলো মশাল জ্বালিয়ে দেয়। সূর্য্য ডোবার এক ঘন্টা পর, বিকেল পাঁচটায় সবগুলো মশাল একসাথে জ্বলে এক গুরুগম্ভীর আবেগপূর্ণ আবহ সৃষ্টি করে যা কিনা উপস্থিত সবাইয়ক আবেগাপ্লুত করে। নিয়ে যায় তাদের পূর্বপুরুষদের আত্মত্যাগের স্মৃতি রোমন্থনে।


রাজকীয় টাওয়ার গার্ড Yeoman Warder রা বীফইটার (Beefeater) নামে বেশী পরিচিত কারন তাদের বেতন দেওয়া হত গোমাংসের পুরু বর্গাকার বড় বড় টুকরো দিয়ে। সে আমলে অতি উচ্চ মূল্যের কারনে খুব কম ইংরেজদেরই গোমাংস খাবার সৌভাগ্য হত।

৫ নভেম্বর বিকেল পাঁচটায় রয়েল টাওয়া গার্ডের বিউগলে বেজে উঠে করুন সংগীত। হাজার হাজার দর্শনার্থী, যাদের মধ্যে বেশীরভাগই নিহতদের পরবর্তী প্রজ্ন্ম, সবাই নিশ্বব্দে প্রদক্ষিণ করে টাওয়ার অফ লন্ডনের পরিখা যেখানে জ্বলছে দশ হাজার মশাল। ডিজাইন আর্টিস্ট টম পাইপার এর টাইটেল দিয়েছে বেয়ন্ড দ্য ডিপেনিং শ্যাডো। খালি গলায় করুন ক্লাসিকাল সংগীত, অন্ধকার, মশালের আলো সব মিলিয়ে এক অদ্ভুত মুর্ছণায় হারিয়েছে সবাই। টাইটেলটি নেয়া হয়েচে ম্যারী বোরডেনের একটি ওয়ার সনেট থেকে,

“They do not know that in this shadowed place

It is your light they see upon my face.”

১১ নভেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠান চলবে প্রতিদিন সন্ধ্যা পাঁচ টা থেকে রাত দশ টা। প্রতিদিন মশালও জ্বলবে একই নিয়মে, সাত দিন ব্যাপী দশ হাজার মশালেল আলো আর সুরের মুর্ছণায় মনে করা হবে নিহতদের। টাওয়ার অফ লন্ডনের বীফইটাররা রাজকীয় সসস্ত্র বাহিনীর পক্ষ থেকে এই অনুষ্ঠান পরিচালনা করবে। মশালগুলো আলাদাভাবে সরিবদ্ধ করে বসানো হয়েছে, প্রতিটি মশাল কমপক্ষে পাঁচ ঘন্টা জ্বলবে। প্রতিদিন রয়েল গার্ড, ক্যাডেটস আর ভলন্টিয়াররা মশালগুলো জ্বালিয়ে দেবে। এই আলো দিয়ে ভবিষ্যত প্রজন্মকে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে সামনের দিকে এগিয়ে যাবার জন্য। ভলন্টিয়ারদের প্রায় সবারই কেউ না কেউ প্রথম মহাযুদ্ধে প্রান দিয়েছে। উপস্থিত দর্শকদেরও অনেকে আছে যাদের পরিবারের কেউ না কেউ (পূর্ব পুরুষ) প্রান দিয়েছে যুদ্ধে।

মোহনীয় এই পরিবেশ প্রতিটি মানুষকে তার নিজের মত করে ভাবার, স্মৃতি রোমন্থন করার সুযোগ করে দিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Post comment