ঢাকাই বিল্ডিংস্
২৭ জানুয়ারী ২০১৯
একটা অদ্ভুত ব্যাপার খেয়াল করলাম। তিলোত্তমা ঢাকায় প্রচুর বিল্ডিং আছে যেগুলোতে প্লাস্টার করা নেই, আবার প্লাস্টার করা থাকলেও রং করা নেই। এটা করলে নাকি ওই ভবনটিকে “আন্ডার কনস্ট্রাকশন” অর্থাৎ এখনো মেরামত চলছে বলে চালানো যায়। অথচ ভেতরে ভাড়াটে থাকছে দিনের পর দিন এমনকি বছরের পর বছর। বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায় রংহীন বা প্লাস্টারবিহীন উঁচু আবাসিক বা বানিজ্যিক ভবন।
মেরামত চলিতেছে বলিয়া চালাইলে কি লাভ?
তখন নাকি বিল্ডিং এর হোল্ডিং ট্যাক্স দিতে হয় না। প্রশ্ন হচ্ছে হোল্ডিং ট্যাক্স কত? একটা ভবনের বাৎসরিক পৌর কর নিশ্চই এত বেশী নয় যার জন্য ভবন মালিকেরা দিনের পর দিন একে রংহীন বা প্লাস্টারহীন করে ফেলে রাখবে? আর দেখাবে এই ভবনের মেরামত চলছে? এই অদ্ভুত প্রতারণা করে ভবন মালিকেরা ঠিক কি পেতে চায়?
দেশ স্বাধীন হবার পর বঙ্গবন্ধু তার চারপাশের সব চাটার দল দেখে ত্যাক্ত বিরক্ত হয়ে বলেছিলেন “আমি পেয়েছি চোরের খনি।” কতখানি ক্রোধ, দুঃখ আর হতাশা থেকে এই কথা তিনি বলেছিলেন তা সহজেই অনুমেয়। তার ৪৭ বছর পর আওয়ামী লীগের যুগ্ম–সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, “এত অসৎ জাতি নিয়ে বেশি দূর এগোনো সম্ভব নয়।” বিস্তারিত নিম্নরূপ:- “আজ আমাদের দেশে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আমাদের জাতির মানুষের মধ্যে নীতি, নৈতিকতা ও সততার সংকট। এত অসৎ জাতি নিয়ে বেশি দূর এগোনো সম্ভব নয়।” উনার সততা মাপতে চাইলে উনি রাজী হবেন কিনা সেটা অবশ্য দেখার বিষয়। তবুও আমাদের মধ্যে “নীতি, নৈতিকতা ও সততার সংকট।” এমন সাহসী কথা বলেছেন তো! শুধু তাই নয়, হানিফ আরো বলেছেন, “প্রত্যেকটা সেক্টরে আজকে মানুষের যে অসততা দেখি, অনৈতিকতা দেখি, এরকম অসততা নিয়ে একটা দেশ খুব বেশি দূর এগোতে পারে না। আজ দেশে দেখেন প্রায় ৮০ ভাগ মানুষ শারীরিক ভাবে অসুস্থ। এই অসুস্থ মানুষের মধ্যে শতকরা ২৭ ভাগ কিডনি রোগী। বাকি ২৫ ভাগ মানুষ ক্যান্সারের রোগী। এর একটাই কারণ হচ্ছে আমাদের নীতিহীন, অসততা, অনৈতিকতার মানসিকতা। আমরা খাদ্যে ভেজাল দিচ্ছি। মাছে ফরমালিন দিচ্ছি। এসব করে একে অপরকে ঠকাচ্ছি।“
বলে ফেলেছেন তো! ব্র্যাভো! কনগ্রাচ্যুলেশনস্ হানিফ ভাই। তবে জনগণ সবার আগে পলিটিশিয়ানদের “নীতিহীন, অসততা, অনৈতিকতার মানসিকতা” থেকে বের হয়ে আসতে দেখতে চায়, তারপর জনগণের পালা। যাই হোক, আল্লাহ্ আল্লাহ্ করেন, এবার দেখেন দুঃসাহসীক বক্তব্যের জন্য আপনাকে ট্রান্সফার করে আবার ছাত্রলীগ সেক্রটারী বানিয়ে দেয় কিনা। – প্রশ্ন হচ্ছে, দেশের রন্ধ্রে রন্ধ্র এরকম চুরি–চামারী চলছে তার দায় তারা কি এড়াতে পারবেন? দশ বছরেরও বেশী সময় ধরে তারা ক্ষমতায়, সর্ব ক্ষেত্রেই তারা।
আবার ফিরে আসি ঐসব ভবন মালিকদের প্রসঙ্গে; এদের এই অদ্ভুত মানসিকতার মানে কি? এসব করে কি ধরনের প্রফিট তারা করতে চাচ্ছে? প্লাস্টার কিংবা রং ছাড়া ভবন কতখানি বিপদজনক সেটাকি তারা জানেনা? কর্পোরেশনের ট্যাক্স ফাঁকি দেবার জন্য ভাড়াটিয়া উঠাবে অথচ ভবন অরক্ষিত করে ফেলে রাখবে। একটা ভবনের আনুমানিক বয়স যদি ১০০ বছর হয় সেক্ষেত্রে ইটের উপর ইট বসিয়ে প্লাষ্টার বা রং ছাড়া বাইরের দেওয়াল এরকম অরক্ষতি হলে ভবনের বয়স অর্ধেকে নেমে যায়। শুধু তাই নয়, সিঁড়িতেও প্লাস্টারিং এবং রেলিং না রাখা। রেলিং ছাড়া সিঁড়ি কতখানি বিপদজনক সেটা নিশ্চই সহজে অনুমেয়। প্রচুর অখ্যাত প্রতিষ্ঠানের ফ্ল্যাটগুলোরও একই অবস্থা। সাধারণ ক্রেতারা অনেক আইন কানুন বা নিয়ম শৃংখলা সম্পর্কে অবগত নয় আর এসবের সুযোগ নেয় বিক্রেতারা। আবার ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানও আছে।
আমি সত্যি জানিনা এতে করে তাদের কি লাভ হয়। তবে ভবন গুলো দেখতে কুৎসিত লাগে।
শহরের সৌন্দর্য নষ্ট করা কি অপরাধ নয়?