বাংলাদেশ ডায়েরী

১৮.০১.২০১৯

আগেরদিন রাত পর্যন্ত আমাদের ফেণী বাসার একদম সামনের দিকে, অর্থাৎ রাস্তার উপরে একটা বড় গেট লাগানো হয়েছে। একটা বড় কাজ হয়েছে। এটা জরুরী ছিলো কিন্তু সরকারী নিয়মকানুনের কারনে ইচ্ছে থাকলেও বানানো যায়নি।

আম্মাকে নিয়ে প্রায় দুই সপ্তাহ ঢাকা থাকার পর ফিরেছি। সকাল দশটার পর তুষার এলো চিটাগাং থেকে। আমরা চার ভাইবোন আবার একসাথ হলাম।

সেদিন শুক্রবার, হাবুর হোটেলের কিরণসহ আমার পাইলট হাই স্কুলের বন্ধু আতিকুল্লা সেলিমের বাড়ী গিয়েছি দেখা করতে। গ্রামের নাম আত্তাবি, ফেণির পশ্চিমে। কিছুদিন আগে ওর বাবা মারা গেছে। আগেভাগে খাওয়াদাওয়া সেরে নিয়েছি কারন জুম্মার নামাজ পড়বো বাসার সামনের বড় মসজিদে, ওটার সরকারী নাম হয়েছে জামে মসজিদ। সামনের অনেক উঁচু মিনার এই মসজিদের আলাদা বৈশিষ্ট। গত চার পাঁচ বছর ধরে রিপেয়ারই হচ্ছে। কবে রিপেয়ার শেষ হবে, কবে আবার আগের মত শান্তিতে নামাজ পড়তে পারবো কে জানে? তবে ঘরের ঠিক সামনেই ফেণীর সবচেয়ে বড় মসজিদ, আমাদের সৌভাগ্য।

বিকেলের দিকে হাছান এলো। সাথে সেজ মামীমা, রীমা আপা, সামনূন, সাবরিনা। আমরাও ওদের সাথে বরদৈন যাবো কিন্তু হাছানের গাড়ীতে এত জনের যায়গা হবেনা। হাছান চীনা বুদ্ধি দিলো, “আরে পিছনের বুটে উঠে চলে যাবো!” আমার চক্ষু চড়কগাছ অবস্থা। আমি নাহয়ওলামগোলাম‘, আমার বুটে উঠতে কোনো সমস্যা নাই। কিন্তু হাছান? ও ব্যাংকের একজন সিনিয়র অফিসার, হেড অফিসে পোষ্টিং। অনেক সম্মানিত ব্যাক্তি। সে ওসব কানেই তুলতে চায় না, “আরে রাখিছ! কতা কম, উডি যা।সামনুন খুব ভালো গাড়ী চালায় মাশা আল্লাহ্। হাইওয়ের উপর দুই ভাই গাড়ীর পেছনে ডলা খেতে খেতে যাচ্ছি, তবে খুব একটা অসুবিধা হচ্ছেনা কারন স্পেস নষ্ট হয় নি।

হাসান গড্ডালিকায় গা ভাসিয়ে ওর গাড়ী সিএনজি তে কনভার্ট করেনি। সস্তায় তিন অবস্থা, পেট্রল ইঞ্জিনকে সি.এন.জি তে কনভার্ট করলে সবার আগে ইঞ্জিনের পারফরমেন্স নষ্ট হয়। দ্বিত্বীয়তঃ ইঞ্জিনের লাইফ কমে যায়। তৃতীয়তঃ লাগেজের জায়গায় বিশাল বিশাল দুইটা লোহার কোলবালিশ অর্থাৎ গ্যাস সিলিন্ডার থাকে, মালপত্র তখন কোলে বা সীটের উপর বহন করতে হয় (আহারে, কি করুন হাল) চতুর্থতঃ এটা ফায়ার হ্যাজার্ড যা কিনা খুবই বিপদজনক।

বরদৈন পৌঁছে গাড়ীর বুটে চড়ার কষ্ট পানি হয়ে গেলো। আমার নানুর বাড়ী, শৈশবে গ্রমের বাড়ী বলতে এটাই। অসম্ভব সুন্দর আমার নানুর বাড়ী বরদৈনের ফকির হাটে অবস্থিত। ঢাকাচট্টগ্রাম হাইওয়ের পাশে ফকির বাজার, ওখান থেকে পিচঢালা চিকন রাস্তা ধরে পশ্চিম দিকে যাবার সময় সবার আগে একটা মসজিদ পড়বে, ওটা লাল মসজিদ। পুরোনো লাল মসজিদ ভেঙ্গে আমার মামাতো ভাই এবং বন্ধু হাছানের উদ্যোগ এবং তত্বাবধানে নতুন আরেকটি মসজিদ বানানো হয়েছে যার রংও লাল। হাছানের সাথে পরিবার এবং গ্রামের সবাই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, আল্লাহর ঘর তৈরী হয়েছে নানুর বাড়িতে। মাগরেবের নামাজ পড়ার সময় খেয়াল করলাম আগেরটার চেয়ে যায়গাও সামান্য বেশী আছে। শিগগীরই সিঁড়ির কাজ শুরু হবে, উপরতলার কাজ হবে। পাশে হবে হুজুরদের থাকার ব্যাবস্থা। রাতের অন্ধকারে মসজিদ, পুকুর সবকিছুর রহস্যময় আঁধারি ছবি ধরে রাখার চেষ্টা করেছি। গ্রামের অনেক পরিবর্তন হলেও একেবারে অচেনা হয়ে যায় নি।

রাতের আঁধারে যতখানি সম্ভব ঘুরে ঘুরে দেখলাম আশপাশ। মুল বাড়ী যেখানে ছিলো তার ছিটেফোঁটাও অবশিষ্ট নেই আর। গাছপালা আছে প্রচুর। মেঝো মামার বানানো ঘরটা এখন দুর্বল হয়ে গেছে। সেজো মামা আর

মামী থাকেন বলে তাঁদের ঘরগুলো ভালো আছে। আশপাশের পাড়া প্রতিবেশীদের ঘরবাড়ি উঠেছে, বিল্ডিং বানিয়েছে কেউ কেউ। অন্ধকারে আর কতখানি দেখা যায়?

নানুর বাড়ী থেকে সামান্য উত্তর দিকে, এক কিলোমিটারও হবে না, সেখানে বিশাল জগন্নাথ দিঘী। তার পাশে একটা পেট্রল স্টেশনে ফরিদ মামাকে দেখতে গেলাম। ফরিদ মামা দেখি পুরা হুজুর হয়ে গেছে, আমাদের দেখে খুব খুশী হলেন।

রাতে হাছান আর সামনূন ফেণী নামিয়ে দিলো। নানুর বাড়ী থেকে আমাদের বাসায় আসতে পনের থেকে কুড়ি মিনিটের বেশী লাগেনা। তবে কাল আবার যাবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Post comment