০৪.০১.২০১৯
০৭.০১.২০১৯

= ফেণী – আমার জন্মভূমি =

জানুয়ারীর ৮ তারিখ অথচ শীতের কোন চিহ্ন নেই। আজ ফেণী যাবো, আম্মাকে ঢাকায় আনতে হবে। রোহন আমাকে টিটি পাড়ায় নিয়ে বাসে তুলে দিলো। পুরোনো অভ্যাস, ফেনী মানেই ষ্টার লাইন। ড্রাইভারের নাম ‘নানা’। সুন্দর নাম। সকাল সাড়ে আটটায় বাস ছাড়লো, ‘নানা’ ড্রাইভার অনেক ধৈর্যের সাথে বাস চালিয়ে মাত্র সাড়ে আট ঘন্টায় আমাকে ফেনী পৌঁছে দিলেন। বাস কাউন্টার থেকে বাসায় ফেরার সময় ব্যাস্ত রাস্তায় যেতে যেতে ভোটের পোষ্টার দেখতে ভালোই লাগছিলো। ফেণী জামে মসজিদের সবচেয়ে উঁচু মিণারটা যেখানে, তার ঠিক উল্টোদিকে আমার বাড়ী। ওই খানেই আমার জন্ম, বেড়ে ওঠা। প্রায় দুই বছর পর বাসায় এলাম।
বাসায় কিছুক্ষন বসে গেলাম কদল গাজী রোডে বাবুর বাসায়। বাবু আবার বাবা হয়েছে কিছুদিন আগে। কনগ্রাচ্যূলেশানস্ বাবু বাবা!
ওখানে এহছান আর তুহিনের (ফুটবল) সাথেও দেখা হয়ে গেলো। তুহিন এখনও আগের মত আছে, খেলাধুলা করে ফিটনেস ঠিক রেখেছে। বন্ধুদের সাথে দেখা হলে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় চলে যায় যেন নিমেষে। বাসায় ফেরার পথে পলাশের সাথেও দেখা করলাম ওর দোকানে গিয়ে। দেখা করে ভালোই হল, নাহয় আর দেখা হত না।
পরদিন হাজারী বাড়ী গেলাম আব্বাস ভাইর সাথে দেখা করতে। কুতুব ভাইও তখন ফেনীতে। প্রবাসে সকল সুখ-দুঃখে সবসময় একে অন্যের সাথে থাকি, নিজের ঘরবাড়ীতে দেখা হবার অনুভূতিই আলাদা। দিদার আমাকে তার মটরবাইকে করে লিফট দিয়েছিলো। গত সপ্তাহের ইলেকশনে নিজাম ভাই ফেণী-২ আসনের এম.পি. নির্বাচিত হয়েছেন। সেদিন নিজাম ভাই ফেণী বাসায় ছিলেন না, ঢাকায় ছিলেন শপথ গ্রহন অনুষ্ঠানে অংশ নেবার জন্য। গোটা শহরের পরিবেশ বেশ আনন্দঘণ। গত দশ বছরে ফেণীর যে অবকাঠামোগত পরিবর্তন এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতি হয়েছে, তার পেছনে নিজাম ভাইয়ের অবদান অনস্বীকার্য। আমরা সবাই তাঁর বিজয়ে আনন্দিত। কনগ্রাচ্যূলেশনস্ মাননীয় সংসদ সদস্য।
আব্বাস ভাই আর কুতুব ভাই ছাড়াও সেখানে অনেকের সাথে দেখা হয়েছে যাদের সাথে কথা বলা শুরু করলেই ফিরে যাই ছেলেবেলায়। আমার স্কুল জীবনের আরেক প্রিয় বন্ধু রিপন সাহাকে দেখে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরলাম। আহা, কত স্মৃতি… গত গল্প। আমার আরেক বন্ধু শিমুর (শিক্ষা বিপনী) বড়ভাই লিটু ভাইর সাথেও দেখা হয়ে গেলো। সবার সাথে বসে গল্প, রসিকতার মাঝে বেশ আনন্দঘণ সময় কেটেছে হাজারী বাড়ীতে। রিপনের কাছে জানতে চাইলাম সমরের কথা, সে জানালো সমরকে কোথায় পাওয়া যাবে।
দিদার আমাকে ট্রাংক রোডে মুক্তবাজারের কাছে নামিয়ে দিলো। সেখানে একটা অফিসে পেলাম সমর কে। হ্যাংলা পাতলা আমার অনেক-অনেক প্রিয় এই ছোট ভাইটি এখন আর সেই স্লীম সমর দেবনাথ নেই, রীতিমত সংসারী ভদ্রলোক। সমরও আমাকে দেখে অনেক খুশী হল, গল্প হল দুই ভাইয়ে, তারপর আবার বিদায়।
পরদিন খুব সকাল সকাল আম্মাকে নিয়ে আবার ষ্টার লাইনে করে ঢাকা রওনা দিলাম। অবাক কান্ড, এবার ফেণী থেকে ঢাকার যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত পৌঁছতে লাগলো মাত্র তিন ঘন্টা। ও খোদা, ম্যাজিক! রাস্তায় আজাইররা জ্যাম না থাকলে ফেণী-ঢাকা বাস জার্নি আদৌ দীর্ঘ নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Post comment