০১.০১.২০১৯
০২.০১.২০১৯
২০১৯ সালের প্রথম দিনটা মর্নিং ওয়াক দিয়ে শুরু করার লোভ সামলাতে পারলাম না। শশুর শাশুড়ী হাঁটতে বের হন, আমিও তাসনুভা আর রাফসানকে নিয়ে ওনাদের পিছু নিলাম। আমাদের সবার খুব ভোর, অর্থাৎ তিন বা সাড়ে তিনটার দিকে ঘুম ভেঙ্গে গেলো। এদিক ওদিক, ইতিউতি করতে করতে এক পর্যায়ে চারিদিকের মসজিদগুলো থেকে ফযরের আযানের মিষ্টি শব্দ কানে আসছিলো তখন মনে হচ্ছিলো এটা স্বপ্ন নয় সত্যি। লন্ডন নয়, এটা ঢাকা। আমার দেশ, I am home (ইচ্ছে করে ‘at’ বাদ দিলাম)।
সেদিনই হাসানের সাথে দেখা করতে গেলাম, হাসান আমার আপন মামাতো ভাই, আবার সহপাঠী। সবচেয়ে বড় কথা আমরা বন্ধু। ঢাকায় এসে সবার আগে ওর সাথে দেখা করা রেওয়াজ হয়ে গেছে। রাতে ওর বাসায় ছিলাম, পরদিন একসাথে ফিরে বিকেলে একটা বিশেষ কাজে মোহাম্মদপুর যাবার সময় কচিকে ডেকে নিলাম। কচিও নিজের কাজে ব্যাস্ত থাকে, তারপরও কষ্ট করে সময় দিয়েছে। কচির সাথে যত না আড্ডা হয় তারচেয়ে বেশী হয় তর্ক, ঝগড়া। তারপরও একে অন্যের সংগ এনজয় করি, বন্ধুত্ব এমনই হয়।
= লুতুপুতু প্রবাসী বনাম স্বাস্থ্যকর বাংলাদেশ =
যদিও মর্নিং ওয়াকে নানা আর নানুর সাথে অনেক মজা করেছে রাফসান আর তাসনুভা, তবু বলছি প্রথম ভোরে ছেলে মেয়েকে নিয়ে মর্ণিং ওয়াকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ভুল ছিলো। ওদের শরীর খারাপ হয়েছে, পেট নেমে গেছে। মর্ণিং ওয়াক করলে পেট খারাপ হয়? হুম হয়, বাতাসে প্রচুর ধুলো, শীশা যেগুলো প্রচুর জীবানু বহন করে, আশপাশের জলায়শ আর নর্দমার নোংরা পানি, সেখান থেকে আসা দুর্গন্ধ। সব মিলিয়ে মনে হয়েছে বাতাসে মিশে থাকা ধুলোবালিতে প্রচুর জীবানু। তৃতীয় দিনেই মা এবং ছেলে-মেয়ে দুটোর ডায়রিয়া, ছেলের আবার নিমোনিয়াও ধরা পড়েছে ইবনে-সিনায় দেখানোর পর।
আমার উচিত ছিলো প্রথম এক সপ্তাহ বাচ্চাদের ঘরের ভেতরে রাখা। আবহাওয়া-জলবায়ুর সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়া। তারপর অবস্থা বুঝে সিদ্ধান্ত নেয়া যে বাচ্চাদের নিয়ে ঘর থেকে বের হওয়া উচিত কি অনুচিত।
দেশে যারা বাস করেন তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আর বিদেশ থেকে আসা কারো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এক নয়। বিদেশ থেকে আসলে আমরা সবাই লুতুপুতু হয়ে যাই, অন্যেরা অবাক হয় কিংবা হাঁসে। কিন্তু হাঁসিঠাট্টার ভয়ে আমরা যদি নিজেদের রক্ষা করার ক্ষেত্রে স্ট্রিক্ট না হই, সেক্ষেত্রে ভয়াবহ বিপদ এমন কি আদরের সন্তানের মৃত্যুও হতে পারে। এমনটি হয়েছেও। দেশে গেছে বেড়াতে, কখন টিবি হয়েছে টেরও পায় নি, ধরা পড়েছে এমন এক পর্যায়ে তখন আর বাঁচানোর অবস্থায় নেই। আরেক ঘটনা শুনেছি বাচ্চার ডায়রিয়া হবার পর ওরস্যালাইন খাওয়ানোর পরও বাচ্চা মারা গেছে। কারন ওরস্যালাইন যেভাবে বানাতে বলা হয়েছে সেভাবে না বানিয়ে পানির পরিমান কম দিয়েছে, আবার রেখে দিয়ে পরে খাইয়েছে। অবশ্যই প্যাকেটে লেখা নির্দেশনা মেনে চলতে হবে, একবার প্যাকেট খুললে ওটাকে শেষ করতে হবে। অনেকে দেখি অর্ধেক ব্যাবহার করে প্যাকেট রোল করে রাখে পরে বাকীটা ব্যাবহার করার জন্য। আল্লাহ্ মাফ করুন, পাঁচ টাকা বাঁচানোর জন্য সন্তানের জীবন বিপন্ন করা মহাপাপ। দেশে গিয়ে ছেলেমেয়েদের যত্ম নেবার বিষয়ে কঠোর থাকতে হবে (কেউ হাসি ঠাট্টা করলে প্রয়োজনে কানের গোড়া দিয়া একটা দিবেন।)।
আল্লাহ্ আমাদের সন্তানদের রক্ষা করুন (আমীন)।