০৮.০১.২০১৯
১৩.০১.২০১৯
= ঢাকা আর ভুইঘর =


চারিদিকে মুখ ঘুরিয়ে দেখলাম। ছেলে, মেয়ে, প্রতিটি মুখ সুন্দর। মন ভালো করা তারুন্যের সৌন্দর্য। আজ ওরা আয়েশ করছে, কিন্তু একদিন ঠিক ওরাই দায়িত্ব নেবে। পরিবার, সমাজ, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে সামনের দিকে। বুক ভরে নিশ্বাস নিলাম, টের পাচ্ছি বাতাসের সাথে ভেতরে ঢুকছে নিকোটিন আর ধুলোবালি। তবু ভালো লাগে। আবেগে আপ্লুত হয় মন। এখন আমি আমার দেশে, এখানেই আমার জন্ম, বেড়ে ওঠা। মৃত্যু কি এখানে হবে?
বিদেশের হাঁটা আর দেশের হাঁটা এক নয়। প্রতি পদে পদে ধাক্কার হাত থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে হাটছি, তবু হাঁটতে ভালোই লাগছিলো। কাওসার বলছিলো, “বঙ্গবন্ধুর বাড়ীটা একটু দেখে যা।” তাই একটা ডিট্যুর নিলাম তবে ৩২ নম্বরের কাছাকাছি গিয়ে দেখি রাস্তা বন্ধ, কিছু একটা হচ্ছে। ইলেকশান শেষ, সরকারের উচ্চ পদস্থ কেউ এসেছে হয়তো. . .
. . . বাংলাদেশে উচ্চ পদস্থ বলতে একজনই, প্রধানমন্ত্রী। বাকী সবগুলা দুধভাত। কিছু হলেই ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী’-র হস্তক্ষেপ ছাড়া সমাধান হয় না। যদিও বিশাল মন্ত্রীসভা, উপদেষ্টা ইত্যাদি আছে। কিন্তু সমাধান দেয় না, কারন কোন ক্রাইম হলে দেখা যায় এদের কারো না কারো সংশ্লিষ্টতা আছে। আচ্ছা! প্রধানমন্ত্রী যদি না থাকে তখন এই দুধভাতগুলো কি করবে? বেশীরভাগই পশ্চিমা কোনো দেশে চলে যাবে হয়তো। ইউরোপ-আমেরিকা মাশাল্লাহ্ পলিটিকাল এ্যাসাইলামের লেবাসে চোর ছ্যাঁচড়দের অভয়ারণ্য। ওখানে গিয়ে দিনের বেলা সুপারমার্কেটে কামকাজ করবে আর সন্ধ্যার পর বাংলা পাড়ায় গিয়ে চায়ের কাপের ঝড় তুলবে। বৃটেন, আমেরিকা, ক্যানাডা এসব দেশে এখনো প্রচুর পতিত নেতা আছে যারা এক সময় দুর্দান্ত ক্ষমতাধর ছিলো। এখন সম্বল সন্ধ্যার পর বাংলাপাড়ায় চায়ের কাপের আড্ডা আর ফেইসবুক। এদের সংখ্যা বাড়ছে।
আমরা ইউ টার্ন নিলাম। সুলতানা কামাল মহিলা কম্প্লেক্সকে একপাশে রেখে লেকের দিকে এগিয়ে পায়েচলা পথ ধরে এঁকেবেঁকে দুই বন্ধু হাঁটছি। লেক সংলগ্ন পার্কে লোকসমাগম কম নয়। আছে প্রচুর
হকারও। এর মাঝে কল্লোল আর কফিলের সাথে ফোনে কথা হল। ডাঃ কফিলের বাসা এখানেই কোথাও, লেকের ধারে। একটা ব্রীজ পেরিয়ে বাঁয়ে টার্ন নিয়ে ১০নং রোডে উঠতেই কফিলের সাথে দেখা।

– কফিল আমাদের পাইলট হাই স্কুলের বন্ধু, একসাথে সিক্স থেকে মেট্রিক পর্যন্ত পড়েছি। সব ক্লাশে ফার্স্ট হত, ৮৭ সালে আমাদের স্কুলের মুখ উজ্জ্বল করে স্ট্যান্ড করেছিলো। সে আমলে স্ট্যান্ড করা ছাত্রদের দুর দুরান্ত থেকে দেখতে লোকজন ছুটে আসতো। কফিল এখন সিনিয়র ডাক্তার, তবে এখনও সেই আগের
মতই আছে। মৃদুভাষী, চুপচাপ নিপাট ভদ্রলোক। একটেু পর কল্লোলও এলো। কল্লোল একেবারে ক্লাস-ওয়ান থেকে একসাথে। আমরা সবাই পানসী রেস্ট্যুরেন্টে গিয়ে বসলাম। কাওসার, কল্লোল আর কফিল। তিন ‘ক’ এর সাথে আমি ‘স’ বিপুল ভাই ফেইসবুকে কমেন্ট করেছিলো। ওখানেও কিভাবে সময় কেটে গেলো বুঝিনি। অনেকদিন পর ছেলেবেলার বন্ধুদের সাথে দেখা হলে কথা শেষ হতে চায় না।





. . . ২০০৫ এর একদম শুরুর দিকে, যখন কান্তার সাথে আমার বিয়ের প্রাথমিক কথাবার্তা চলছিলো শাহজাহান কাকা তখন স্কটল্যান্ডে। আব্বা (আমার শশুর) উনাকে তদন্তের ভার দিলেন, অর্থাৎ ছেলে
কেমন খোঁজ খবর নিতে। খোঁজ খবর নেবার কি আছে? বিদেশে থাকে এসব পোলাপানের চরিত্রের ঠিক আছে? তারপরও শাহজাহান কাকা সেই স্কটল্যান্ড থেকে লন্ডন আসলেন, সাথে এক বন্ধুও ছিলো। শীতের এক সন্ধ্যা আমার বাসায় কাটালেন। আমার সাথে
অনেক গল্প করলেন, উপরে গিয়ে বেডরুম বাথরুম দেখলেন। নীচের লিভিংরুম, কিচেন, আরেকটা টয়লেট সব দেখলেন। তারপর বাংলাদেশে খবর পাঠালেন, “চোখ বন্ধ কইরা বিয়া দিয়া দাও।” আমার শশুর-শাশুড়ীও চোখ বন্ধ করলেন, সেই থেকে কান্তাবিবির লাইফ ‘হেল’। আর শাহজাহান কাকার কাছে আমি চীরঋণী।


শাহজাহান কাকা, কাকী, রাতুল, রাহাত এবং সাকিব, সাথে রাতুল ও রাহাতের বৌ, রাতুলের মেয়ে সবাই এসেছিলো। সন্ধ্যাটা খুবই গমগমে আর জমজাট ছিলো ওদের উপস্থিতিতে।








আম্মাকে নিয়ে আগামীকাল আবার বের হবো ইনশা আল্লাহ্।