ঘড়ি দেখলাম।
বেলা আড়াইটা। আর মাত্র আধ ঘন্টা বাকি।
তিনটায় কাজ শেষ করে বাসায় যাবো। বাসায় যেতে যেতে বিকেল চারটা। ততক্ষনে স্কুল থেকে মেয়েকে নিয়ে বৌ ঘরে ফিরবে। মেয়ে পড়ে ক্লস ওয়ান-এ। ছেলেটা ছোট। বাসায় গিয়ে বৌয়ের সাথে খুনসুটি আর বাচ্চা দুটোর সাথে কতক্ষন কুস্তাকুস্তি করা যাবে। তারপর হাতে এক কাপ চা নিয়ে আরাম করে টিভি দেখা, ল্যাপটপ নিয়ে ফেইসবুকিং বা বই পড়া। ভাবতে ভাবতে হারিয়ে যাই নিজ ভূবনে।
ঘর আমার সবচেয়ে প্রিয়।
আমাদের গাড়ী তখন ইস্ট লন্ডনের Upper North Street পেরিয়ে E3 এলাকায় ঢুকেছে। Upper North Street আর Bow Common Lane এর মাঝাখানে যেখানে ক্যানেলটা আছে ওটা হচ্ছে দুটো পোস্ট কোড এলাকার বর্ডার। ক্যানেলের নাম লাইমহাউজ কাট (Limehouse Cut)। ক্যানেলের উত্তরে E3 আর দক্ষিনের পোস্টকোড এলাকা E14। দুই মাইল দীর্ঘ লাইমহাউজ কাট খনন শুরু হয় ১৭৬৭ সালে বো লকস্ (Bow Locks) থেকে। শেষ হয় ১৭৬৯ সালে, লাইমহাউজ বেসিনে।
গাড়ীতে আমরা চারজন লন্ডন মেট্রপলিটন পুলিশ অফিসার্স। অন ডিউটি, ইন ফুল ইউনিফর্ম। তিনজন স্টুডেন্ট অফিসার আর ড্রাইভিং সিটে আমাদের টিউটর, ঝলমলে দুর্দান্ত স্মার্ট সেড্রিক ড্রিং। স্টুডেন্টদের মধ্যে আমি সামনে, অপারেটর। পেছনে আমার দুই কলিগ, কায়েস বেইগ আর টারলিং ওয়েইস্ (এগুলো সব ছদ্মনাম)। বেইগ এশিয়ান মুসলমান, পূর্বপুরুষ ভারতীয়। ওয়েইস্(Weiss) নীলচোখা সাদা ইংরেজ, জন্ম ইংল্যান্ডের এসেক্স অঞ্চলে। সেপ্টেম্বর মাস। তখনও গরম বেশ ভালোই পড়ছে, আরামদায়ক গ্রীষ্ম। গ্রীষ্মের সবচেয়ে বড় সুবিধা লম্বা দিন। সূর্য্য ডোবে প্রায় রাত নয়টায়। আমরা ফুল ইউনিফর্ম পরা। আছি মার্কড আই.আর.ভি তে, (Incident Response Vehicle)। মার্কড বলতে পুলিশের সীল-ছাপ্পর মারা, লাল-নীল বাত্তিওয়ালা পুরোদস্তুর পুলিশ কার। আমাদের কোড হোটেল-ট্যাংগো টু-জিরো-এইট-Early (HT208E)। HT হল মেট্রপলিটন পুলিশ টাওয়ার হ্যামলেটস বারার (Borough) কোড। প্রত্যেক বারার কোড ভিন্ন যেমন, নিউহ্যামের কোড কিলো ফক্সট্রট (KF)। ‘Early’ কারন আমাদের শিফট্ সকাল সাতটা থেকে বেলা তিনটা পর্য়ন্ত।
যদিও আমরা স্ট্যুডেন্ট অফিসার্স তাতে কিছু আসে যায় না। পদবীর দিক থেকে টিউটর আর আমরা সমান সমান, একে অন্যের কলিগ মাত্র। আমি আগে এসেছি তাই আমি সিনিয়র, আমাকে জ্বী হুজুর হ্যাঁ হুজুর বা তোষামোদি করতে হবে এমন কিছু নয়। আবার এতে করে খুশী হবারও কিছু নেই কারন দায়িত্বের বোঝা সবার জন্য সমান। বরং জুনিয়র হয়ে থাকলে সিনিয়রের আঁচলের তলায় থেকে আরাম করা যেত। অথচ যে কোন এ্যাকশনে সমান তালে থাকতে হবে। আমাদের ঘাড়ে বরং দায় বেশী, কারন ওদের কাছে আমরা ফ্রেশী। মাত্র ট্রেনিং শেষ করে এলাম আইন কানুন এখনো মুখস্ত আছে। সুতরাং একশানে গেলে লীড নিতে হবে আমাদেরকেই।
বো কমন লেইনের (Bow Common Lane) ট্রাফিক বাতি সবুজ হলে ধীরে সুস্থে গাড়ি বাঁয়ে টার্ন নিয়ে সেইন্ট পলস্ ওয়েতে পূব দিকে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। এখনও স্কুল-রানের ব্যাস্ততা শুরু হয় নি তাই গাড়ীর ভীড় ভাট্টা কম। উজ্জ্বল দিন, সুন্দর নীল আকাশ। হঠাৎ দেখি মিনিটখানেকের মধ্যে ঝলমলে রোদেলা নীল আকাশ মেঘে ঢাকা পড়ে গেলো। বৃষ্টির সুস্পষ্ট ইংগিত। হায়রে বৃটিশ ওয়েদার।
ডানে বিশাল সেইন্ট পলস্ ওয়ে (St. Paul’s Way) ট্রাস্ট স্কুল। এই সেদিনও এটা পুরোনো ছোট খাট ঘিঞ্জি স্কুল ছিলো। ২০১২’র অলিম্পিক কে সামনে রেখে ইস্ট লন্ডনের সব পুরোনোকে ভেঙ্গে নাতুন সব চোখ ধাঁধানো স্ট্রাকচার গড়া হয়েছিলো। ইস্ট লন্ডনকে এখন আর খাইষ্টা বলার জো নেই। বরং এখানে বসবাস করতে হলে বেশ ধনীই হতে হবে। ট্রান্সফরমেশনের প্রভাব সেইন্টস্ পল ওয়ে ট্রাস্ট স্কুলেও পড়েছে। সব ভেঙ্গে চুরে নতুন বিশাল ক্যাম্পাস। ছেলেমেয়েরা প্রান ভরে নিশ্বাস নিতে পারে।
নতুন ভবনের অসাধারণ স্থাপত্যশৈলীর দিকে চেয়ে যখন চোখ জুড়োচ্ছিলাম আমাদের পুলিশ কার তখন স্কুলের সামনের জেব্রা ক্রসিংটা হেলেদুলে পার হচ্ছিলো। ঝিরিঝিরি বৃষ্টির শুরু, আর তখনই রেডিওতে নারীকন্ঠের খসখসে সার্কুলেশন (অবশ্যই ইংরেজীতে),
. . .“ইমিডিয়েট রেসপন্স প্রয়োজন, দুজন কৃষ্ণাঙ্গ, পুরুষ, দুজনই স্বসস্ত্র, উভয়ে ছুরি হাতে সংঘর্ষে লিপ্ত।” . . .
কয়েক মুহুর্ত নীরব, তারপর আবার, . . .
“লোকেশন; ইমোট ক্লোজ E1 এর ব্লকড্ বিল্ডংয়ের উঠোন. . . মাইল এন্ড (Mile End) পার্ক সংলগ্ন রিজেন্টস্ লেকের দক্ষিনে. . . কমোডোর স্ট্রীট এবং সোউলবে স্ট্রীটের মাঝামাঝি হারফোর্ড স্ট্রীটের পশ্চিমে।”
আবার নীরবতা, দম বন্ধ পকেট নোটবুকে নোট নিচ্ছি, আমরা জানি আরো খবর আসছে, . . .
“Suspect description: প্রথম জন, উচ্চতা ছয় ফুট, হালকা গড়ন, পরনে কালো ট্র্যাকস্যুট ট্রাউজার্স, সাদা হাফ হাতা টি শার্ট, তার উপর একটা ভেস্ট সম্ভবতঃ নাইফ-ভেস্ট (knife proof vest), কালো ট্রেইনার্স(দেশে আমরা যাকে বলি কেডস্)।”. . .
আবার সব নীরব, কয়েক সেকেন্ড পর, . . .
“দ্বিতীয় জন, প্রথম জনের চেয়ে একটু লম্বা, ছয় ফুট দুই বা তিন। মাঝারী স্বাস্থ্য। কালো ট্র্যাকস্যূট ট্রাউজার্স, কালো টি-শার্ট, সাদা সোলওয়ালা কালো ট্রেইনার্স. . . “
রেডিওতে সার্কুেলেশন তখনও চলছে, ঘটনাস্থল মুহুর্তের মধ্যে চিনতে পারলাম। আমরা ওখান থেকে এক মাইলেরও কম দুরত্বে আছি। সেড্রিকের দিকে তাকালাম, চকিত দৃষ্টি বিনিময়, অর্থাৎ কাজটা নিচ্ছি আমরা। রেডিওতে বললাম,
“Control, show 201E” মুহুর্তে গর্জে উঠে গাড়ী।
“টু – ও – ওয়ান আর্লি, রিসিভড্।” কন্ট্রোল থেকে দ্রুত জবাব।
সেড্রিক গাড়ীকে হওয়ায় উড়াতে শুরু করলো যেন। সাইরেন বাজছে, বাতি জ্বলছে আর নিভছে, বেহিসাবী গতিতে গাড়ী চলছে যেদিক দিয়ে খুশী। পথ পেলেই হল, রাইট বা রং সাইড বিষয় নয়। ট্রাফিক লালবাতিও সমস্যা নয়। হাম্প (speed breaker) পড়লে সেখানেও গতি কমছেনা। এখন আমাদের ঘটনাস্থলে পৌঁছতে হবে ৫ মিনিটের মধ্যে। ইতিমধ্যে রেডিওতে শুনলাম ট্রোজানের দুটো ইউনিট আর এয়ার ইউনিটও (হেলিকাপ্টার) আসছে। আরো আসছে কভার্ট ইউনিট (আনমার্কড গাড়িতে সাদা পোষাকের পুলিশ)।
রাস্তায় প্রতিটি যান, মানুষ নির্বিশেষে আমাদের পথ করে দিচ্ছে। সেড্রিক বাম্পার স্পীডে সেইন্ট পল’স্ ওয়ের উপর দিয়ে বার্ডেট রোডের জংশন পেরিয়ে রোডসওয়েল (Rhodeswell) রোড, বেন জনসন রোড হয়ে ডানে মোড় নিয়ে হারফোর্ড স্ট্রিট। তারপর সোজা গিয়ে ডানে মোড় নিয়ে কমোডর স্ট্রীট, ওটা আবার ডেড এন্ড। পাঁচ মিনিট নয়, আমার মনে হল এক মিনিটেরও কম সময়ে পৌঁছে গেলাম। এদিকে বৃষ্টি ভালোই হচ্ছে তবে চারদিক অন্ধকার হয়ে যায় নি। ইমোট ক্লোজ আমাদের বাঁয়ে।
গাড়ী থেকে নেমে ইমোট ক্লোজের দিকে এগুতেই ছেলে দুটোকে দেখা গেলো। Description মিলে গেছে। ওরা আমাদের দেখতে পাচ্ছে। সাদা টি-শার্টওয়ালা কি মনে করে ভেস্ট খুলে ফেলে দিলো। পালাচ্ছে ওরা।
প্রানপনে চীৎকার করে বললাম,
“STOP! Police!! DO NOT move!”
একি? আমার গলা দিয়ে শব্দ বের হলনা কেন? এর মধ্যে শুনলাম,
“STOP! Police! DO NOT move!!!” বেইগ এর গলা।
উত্তেজনায় আমার ভোকাল কর্ড সীজড্। ট্রেনিং স্কুলের বাইরে বাস্তব ক্রাইম স্পটে আমার প্রথম কমান্ডিং শাউট। আমার মিস হয়েছে বেইগের হয় নি।
ইতিমধ্যে দুজনই সোজা সোউলবে স্ট্রিটের দিকে দৌঁড় দিয়েছে। একজন ডানে আরেকজন বাঁয়ে দে-ছুট্। আমরা ওদের তাড়া করছি। ঘাসের উপার সাদা টি-শার্টওয়ালার ভেস্ট টা পড়ে থাকতে দেখলাম। ওটার গায়ে লেগে থাকা রক্ত বৃষ্টির জলের সাথে মিলে ঘাসগুলোকে রন্জিত করেছে। ভালোই দৌড়াচ্ছে ওরা। দুজন মো-ফারাহ্, বিশ্বের দ্রুততম। আমি নিশ্চিত ওরা সোমালিয়ান আফ্রিকান। ওয়েইস্ বললো আমি সাদা টি-শার্টওয়ালাটা নিচ্ছি (যেটা বাঁ দিকে গেছে)। আমি আর বেইগ ডানেরটা নিলাম। আমাদেরটার গতি বেশী। কিছুতেই তাল রাখতে পারছিনা।
ইমোট ক্লোজ থেকে সোউলবে স্ট্রীটে ডানে মোড় নিয়ে আমাদের আসামী প্রাণপনে মাইল এন্ড (Mile End Park) পার্কের দিকে ছুটেছে। সামনে রিজেন্ট ক্যানেলের উপরের ফুট ব্রীজ পেরিয়ে আবার ডানে মোড় নিয়ে আমাদের আসামী ঝোঁপের আড়ালে হারিয়ে গেলো। এর মধ্যে দুর্ধর্ষ ট্রোজান ইউনিটের বিম.এম.ডাব্লিউ এক্স-ফাইভ শাঁই করে এগিয়ে লেকের ফুট ব্রীজের সামনে থামলো আর নিমেষে চারজন ফায়ার-আর্মড পুলিশ নেমে তার পিছু নিলো। উপরের হেলিকাপ্টারটা মাথার উপর থেকে হাতুড়ি পেটাচ্ছে।
বেইগ গতি বাড়িয়ে দিলো। আমি পেছনে পড়ে গেলাম। হঠাৎ মনে পড়লো বেইগ সাঁতার জানেনা। এই বৃষ্টিতে জোরে ছুটতে গিয়ে পা পিছলে যদি ক্যানেলে পড়ে যায়? এবার আমিও প্রাণপনে ছুটছি। ভারি বুটজুতা, কোমরের বেল্ট-কিট আর বুকে ভারি ভেস্ট পরে দ্রুত দৌঁড়াতে গিয়ে কাহিল অবস্হা। বেইগ কে দেখলাম এক পলক, ঠিক আছে। এবার আমি ফুটব্রীজ পেরিয়ে ডানে না গিয়ে বাঁ দিকে গেলাম যাতে করে আসামীকে মুখোমুখি থামাতে পারি। জানি ওর হাতে ছুরি আছে, বিপদ দেখলে গ্যাস চার্জ করবো, ব্যাটন তো আছেই। যেদিক দিয়ে এখন যাচ্ছি সেটা পার্কের ভেতরের পীচঢালা হাঁটা পথ, নাম ফোর পাউন্ড পাথ।
এরপর মাইল এন্ড রোড পার হয়ে সিঁড়ি দিয়ে ক্যানেল পাথে নামার সময় দেখি আরেকটা ট্রোজান (Fire armed police) অন্য আরেরকটা গাড়ী থেকে নেমে আমার পিছু পিছু আসছে। ক্যানেল পাথে নেমে মাইল এন্ড রোডের ব্রিজের নীচে অন্যপাশে দেখলাম আগের ট্রোজান অফিসারেরা আমার আসামীকে হাতকড়া পরাচ্ছে। আসামীর হাতের বাহু আর সারা গায়ে বেশ ভালো পরিমান রক্তের ছাপ দেখতে পেলাম। ক্লান্ত আমি, হাঁফাচ্ছি। এবং হতাশ। দুহাত প্রসারিত করে শ্রাগের ভংগিতে বললাম,
“এটা আমার এরেস্ট ছিলো!”
খুবই মার্জিত চেহারার একজন ফায়ার-আর্মড তরুন অফিসার মিস্টি হেঁসে, অত্যন্ত বিনয়ের সাথে, বিশুদ্ধ রয়েল লন্ডন এ্যাক্সেন্টে, কোমল কন্ঠে বললো,
“আর একটা সেকেন্ড আগে আসলে ও তোমার হত অফিসার, আমি সত্যি দুঃখিত।”
কে বললবে এই লোক লন্ডন মেট্রপলিটন পুলিশের ট্রোজান ইউনিটের একজন যাদের দেখলে ভয়াবহ সব ক্রিমিনালরা ঘটনাস্থলে প্যান্ট ভিজিয়ে ফেলে? পরিপাটি করে চুল আঁচড়ানো, বৃষ্টির জল ওর চুলের স্টাইল পাল্টাতে পারেনি। নিশ্চই ওটারপ্রুফ জেল মেখেছে চুলে। ভদ্র, সৌম্য চেহারার এই ভদ্রলোককে বেশী মানাতো লন্ডনের কোন এক রোলস রয়েস শো রুমের কাস্টমার এ্যাডভাইজার হিসেবে।
বেইগ কে দেখলাম সেও এগিয়ে আসছে। বললাম,
“এটাকেতো ট্রোজান নিয়ে গেলো। চলো, সোউলবে স্ট্রীটে ফিরে যাই, দেখি ওয়েইস্ এর কি অবস্থা।”
ইতিমধ্যে রেডিওতে জেনেছি ওয়েইস্ তার আসামীকে ধরতে পেরেছে, আসামী নিজেই দুহাত উপরে তুলে উপুড় হয়ে ভেজা রাস্তায় শুয়ে পড়েছে, খুব একটা বেগ পেতে হয় নি। তার ডান হাতের চারটি আঙ্গুল ভেতর থেকে গভীরভাবে কেটে গেছে কারন সে প্রতিপক্ষের ছুরি মুঠ করে ধরে প্রতিপক্ষকে স্ট্যাবিং করছিলো।
বার বার কন্ট্রোল থেকে আর এয়ার ইউনিট(Helicopter) থেকে প্রশ্ন করা হচ্ছে আসামীরা অস্ত্র ব্যাবহার করছিলো সোগুলো সীজ্ করা হয়েছে কি না? ভালো কথা! ট্রোজানদের জিজ্ঞেস করলাম, বললো, “নো ট্রেস।” কন্ট্রোল এবার ডগ ইউনিট তলব করলো।
আমরা, সাথে দুটো প্যাট্রল ইউনিট, দুটো ট্রোজান ইউনিট, আটজন আন্ডারকভার অফিসার সবাই মিলে তন্ন তন্ন করে পুরো এলাকা খুঁজলাম। দু দুটো ছুরি। বেমালুম গায়েব। এর মধ্যে ডগ ইউনিটও এলো। তারাও খুঁজে পেলোনা। টুইটুম্বুর ক্যানেলের মাঝখানে ফেলে দিলে খুঁজে পাবার কথাও না। আবার ক্যানেলে ছুরি পাওয়া গেলেও কি লাভ। পানিতে ডুবে ফরেনসিক এভিডেন্স নষ্ট। ওদের সারা গায়ে স্ট্যাবিং এর ক্ষত, এই এভিডেন্স কি যথেষ্ঠ নয়?
আমি আর বেইগ আমাদের টিমের বাকি দুজনের কাছে ফিরে এলাম। সোউলবে স্ট্রীটের সাথে টোবি লেইন যেখানে মিশেছে, সেই মোড়ের কোনে Solebay Primary Academy’র সামনে ফুটপাথে হাঁটুভেঙ্গে পাছার উপর বসে আছে ওয়েইসের আসামী। হাঁটুর উপর দুহাত রাখা, হ্যান্ডকাফ পরানো। ডানহাতের আঙ্গুল থেকে তির তির করে দ্রুতফোঁটায় রক্ত পড়ছে ফুটপাথের উপর। সে রক্ত চিকন ধারয়া বৃষ্টির জলের সাথে রাস্তার ড্রেনেজে গিয়ে পড়ছে। এ্যাম্মুলেন্স আগেই এসেছে কিন্তু এখনও এসেসমেন্ট চলছে। ব্যান্ডেজ সময় হলে দেওয়া হবে। শরীরের অন্যান্য জায়গাওয় ইনজ্যুরি আছে তবে এই মূহুর্তে হাতের ক্ষতের দিকে মনোযগ দেওয়া বেশী জরুরী।
আমি পুলিশ টেপ দিয়ে এরিয়া কর্ডন করে ফেললাম। বৃষ্টির বেগ দ্বিগুন বেড়ে গেছে। এর মধ্যে সাবই বৃষ্টিতে ভিজে কাজ করছে। এ্যাম্বুলেরন্স ক্রু, আমরা এবং বাকীরা। মাথায় বৃষ্টির পানি পড়লে আমার সমস্যা হয়। এখন হচ্ছেনা কারন মাথায় ফ্ল্যাট-হ্যাট পরা। হ্যাট আবার কার্নিশওয়ালা। এই হ্যাট পরে প্রথম যখন আয়নায় দেখি, নিজেকে মনে হচ্ছিলো ইন্ডয়ান ট্রেনের টিটি। আমাদের আরেকধরনের হ্যাটও আছে, নাম বিট হ্যাট (হেলমেটের মত)। ওটা পরলে খুব অভিজাত দেখায়। হ্যাটের কার্নিশের কারনে নাকে কানে পানি পড়ছেনা। কাঁধ, বুক আর পিঠ ভিজে এককার। গাড়িতে ওয়াটারপ্রুফ জ্যাকেট আছে কিন্তু পরছিনা। গরমকাল, বৃষ্টিতে ভিজতে ভালো লাগছে।
ছেলেটাও বৃষ্টিতে ভিজছে। গায়ে এতগুলো যখম, ডান হাতের চার আঙ্গুল মাঝ বরাবর গভীরভাবে কাটা। একদম হাঁড় পর্যন্ত। আঙ্গুলের ডগা নীল হয়ে এবার কালো হয়ে গেছে। প্রচন্ড ব্যাথায় মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে কান্নাকাটি করার কথা। অথচ ওর চেহারায় কোন ভাবান্তর নেই। উনিশ কুড়ি বছর বয়সে সবাই এমন হিরোগিরি দেখায়। আমরাও দেখিয়েছি। শেষ হওয়া সিগারেট হাতের মুঠোয় নেভাতাম। অনেক জ্বলতো, অথচ চোখের পাতাও নড়তোনা। আগুনে ছুরি গরম করে দম আটকে টু-শব্দটি না করে শরীর থেকে ছররা বুলেট বের করা। হায়রে তারুণ্য। হাঁসি পাওয়া অতীত।
ওয়েইস্ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলো,
“কি হয়েছিলো”?
-“কিছুহয়নি।”
“হাতে আর গায়ে এত ইনজুরি, কিভাবে হল।?”
-“আই হ্যাভনোক্লু।”
“যার সাথে ফাইট করছিলে, সে কে?”
-“কারোসাথেফাইটিংকরছিলামনাতো?”
“তোমার হাতে ছুরি ছিলো, কোথায় ওটা।”
-“আমারহাতেকিছুইছিলোনা।”
সেড়্রিক বললো, বাদ দাও। আগে হসপিটালে নিয়ে চিকিৎসা করানো হোক। তারপর দেখা যাবে।”
“এবার হতে হবে হসপিটাল গার্ড” – মনে মনে ভাবলাম, তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস গোপন করলাম।
কোন আসামী যখন আহত তখন তাকে এ্যারেষ্টিং অফিসারের দায়িত্বে হসপিটালে নিয়ে যায়। যতক্ষন না তার চিকিৎসা শেষ হয় ততক্ষন তার পাশে থাকতে হয়। যেহেতু আসামী বিপদজনক সেহেতু সেখানে দুজন সার্বক্ষনিকভাবে পাশে থাকবে এটাই নিয়ম। সমস্যা হল একবার হসপিটালে কাউকে নিয়ে গেলে কতক্ষনে ডাক্তারের দেখা মিলবে বলা মুশকিল। বেশীরভাগ সময় ডাক পড়তেই লেগে যায় দুই ঘন্টা। তা আবার প্রাথমিক দেখভালের জন্য। এরপর সিদ্ধান্ত হয় এখন কি হবে। তার জন্য আরো কয়েক ঘন্টা অপেক্ষা। এরপর চিকিৎসা, আবার প্রসেসিং, আবার আরেকটি চিকিৎসা, আবার প্রসেসিং। কতক্ষন লাগবে কেউ জানেনা। যতক্ষনই লাগুক, পুলিশ পাশে থাকতেই হবে। তাই এই গোপন দীর্ঘশ্বাস। আমরা রওনা দিলাম। রয়েল লন্ডন হাসপাতাল মাত্র এক মাইল দুরে। ওয়েইস্ তার আসামীকে নিয়ে এ্যাম্বুলেন্সে। আমরা গাড়ি নিয়ে পেছনে।
ইস্ট লন্ডনের হোয়াইটচ্যাপেলে অবস্থিত রয়লে লন্ডন হাসপাতাল বৃটেন তথা ইউরোরপের সবচেয়েব বড় হাসপাতাল। ২০১২’র আগে এই হাসপাতালও ঊনিশ শতকের পুরোনো ঘিন্জি ভবনের ভেতর ছিলো যা কিনা এখন রূপ পাল্টে অত্যাধুনিক নয়নাভিরাম হাসপাতালে পরিনত হয়েছে। বিশাল আয়তন, অনেক বেশী ডাক্তার আর স্পেশালিস্ট নিয়ে এত সুন্দর হাসপাতাল (অনেকের মতে) এই খাইস্টা এলাকায় বেমানান। “হোয়াইটচ্যাপেলে এত অভিজাত হাসপাতাল? ছ্যাঁ!” আমার দুটো বাচ্চার জন্ম এখানে, কখনো কোন কম্প্লেইন করতে হয় নি।
বৃটেনের বাকি সবগুলো হাসপাতালের মত এখানেও A&E (এক্সিডেন্ট এন্ড ইমার্জেন্সী) ডিপার্টমেন্টে প্রচুর সময় লেগে যায়। সত্যিকার ইমার্জেন্সী হলে তাৎক্ষনিক ব্যাবস্থা। কিন্তু এখুনি মরে যাচ্ছেনা এমন রোগীদের অপেক্ষা করতে হয় পরম ধৈর্যের সাথে। যেন অনন্তকাল। আসামীর দায়িত্বে আছে ওয়েইস্। সাথে আমি আর টিউটর সেড্রিক। বেইগ আরেকটা ইউনিটের গাড়িতে করে চলে গেছে স্টেশনে, রিপোর্ট রেডি করার জন্য। A&E’র ওয়েটিং রুমের বড় ঘড়িটার দিকে চোখ পড়লো, বেলা চারটা আটচল্লিশ । সারিবদ্ধ সীটের মাঝামাঝি একটা রো তে আমি, মাঝখানে আসামী তারপর ওয়েইস্। কতক্ষন বসে থাকতে হবে জানিনা। আমি এর মধ্যে আমার নিজের একটা রিপোর্ট লেখতে শুরু করলাম মোবাইলের নোটপ্যাডে। নিজের গরজেই লিখছি। প্রথমতঃ যত দেরী হয় তত বেশী ভুল হয়। দ্বীতিয়তঃ রিপোর্টিং অফিসার আমি, একজন আমাকে অভিযোগ করেছে আরেকজন তাকে বর্ণবাদী গালাগাল করেছে। তৃতীয়তঃ এখানে কিছু না করে বসে থাকতে দম বন্ধ হয়ে আসছে।
আজ বেলা বারোটার দিকে আমরা ওয়ার্নার স্ট্রীট থেকে হ্যাকনী রোডে যাচ্ছিলাম। এক ভদ্রলোক আমাদের ইশারায় গাড়ী থামাতে বললো। যেহেতু আমি ড্রাইভারের পাশের সীটে ছিলাম তাই বের হয়ে জানতে চাইলাম কিভাবে সাহায্য করতে পারি? ব্রিটিশ বাংলাদেশী (সিলেট) ভদ্রলোক। বয়স বাইশ থেকে পঁচিশের মত। জানালো সে আর তার ভাই এ পথ দিয়ে গাড়ী নিয়ে যাচ্ছিলো। একটা সাদা ভ্যান ট্রাফিক জ্যাম করছিলো। তারপরও ওরা রিভার্স করে সাদা ভ্যানকে যেতে দিয়েছে অথচ যাবার সময় ড্রাইভার চীৎকার করে তাদের উদ্দেশ্যে বলা, “Get lost you fu***ng Paki. আমি ডিটেইলস নিলাম। প্রথমে তাদের (অভিযোগকারীর) নাম, জন্ম তারিখ, ঠিকানা, ফোন নাম্বার ইত্যাদি। তারপর সাদা ভ্যান এবং তার আরোহীদের সম্পর্কে বৃত্তান্ত জানতে চাইলাম। কিন্তু যে তথ্য পেলাম এতে করে অভিযোগ দাঁড় করানোর কোনো সুজোগ নেই। একটা সাদা ভান। হয়তো ফোর্ড (Ford) কিংবা রেনো (Renault)। ভ্যানে ড্রাইবার সহ তিনজন, মাঝখানেরটা অল্প বয়সী, ১০/১২ বছর বয়স হবে। গেছে গসেট স্ট্রীটের দিকে। ভ্যানের নাম্বার প্লেট পড়তে পারেনি, আরোহীরা শেতাংগ এ ছাড়া অন্য কোন তথ্য নেই, কিভাবে অভিযোগ দাঁড় করাবো? কার বিরুদ্ধে? CCTV’র সাথে যোগাযোগ করলাম ওরাও এই সীমিত তথ্য দিয়ে গাড়ী সনাক্ত করতে পারবেনা বলে দিয়েছে। আমি ভদ্রলোককে খোলাখুলি জানালাম এই বলে যে তাদের স্টেটমেন্ট নেবো কিন্তু ক্রাইম রিপোর্ট বেশীদুর এগোবেনা কেননা এত সীমিত তথ্য দিয়ে আসামী সনাক্ত করা সম্ভন নয়।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে গাল দিয়েছে ‘পাকি’ বলে, বাংলাদেশী ব্রিটিশের এত গরজ কিসের? এর উত্তর হল দক্ষিন এশিয়ার সবাই, অর্থাৎ পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলংকা এবং আমাদের মত দেখতে সবাই এদের কাছে ‘পাকি’। যেমন কালো হলেই আফ্রিকান, হোক সে পাপুয়া নিউ গিনি কিংবা ক্যারিবিয়ান। যে কোন বর্ণবাদী শব্দের প্রয়োগ এখানে অবৈধ এবং কোর্টের মাধ্যমে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অবশ্যই প্রমাণীত হবার পর। প্রমাণ হোক বা না হোক, বর্ণবাদের অভিযোগ যেহেতু এসেছে, রিপোর্ট করতেই হবে।
হসপিটালের উত্তপ্ত ওয়েটিং রুমে বসে ঘামছি আর আস্তে আস্তে আমার স্যামসাং S8 মোবাইল ফোনের নোটপ্যাডে বর্ণবাদী অভিযোগের উপর রিপোর্ট লিখছি। মোবাইল থেকে আমার পুলিশ মেইলবক্সে ইমেইল করবো তারপর ফাইনাল রিপোর্ট পাঠিয়ে দেবো। সত্যি কথা বলতে ক্লোজ করে দেবো। এই ইনভেস্টিগেশন বেশীদুর এগুবেনা। অসাধারণ সুন্দর আর সেক্সী এই S8 এর সামনের অংশ পুরোটা জুড়ে স্ক্রীন। মাত্র সেদিন কিনলাম, কিন্তু ইউজ করে আরাম পাইনা। আমার আইফোনই ভালো। যাই হোক, কোন ভাবে রিপোর্ট লিখে আবার ভালোমত দেখে নিজের মেইলবক্ষে ইমেইল করে দিলাম। এখন কিছু করার নেই, বসে বসে আসামীকে পাহরা দিচ্ছি। সময় পড়েছে ট্রাফিক জ্যামে। “মূহুর্ত কেন এতো বড়? সময় কেন এতো ফাঁকা?” মনে মনে অর্ণবের গানটা গাইলাম, কতক্ষন ফেইসবুক, কতক্ষন হোয়াটসএ্যাপ বা টুইটারে ঘোরাঘুরি। এক সময় প্রাথমিক চেকাপেরর জন্য ডাক পড়লো। আসামীকে ভালোমত পরীক্ষা করে বললো ট্রিটমেন্ট রুম সবগুলো বিজি। যে কোন একটা ফ্রী হলে ড্রেসিংটা অন্ততঃ করা যাবে। ডাক্তার আরো বললো, “দেখে মনে হচ্ছে লাইফ চেঞ্জিং ইনজুরি।”
Life Changing Injury হচ্ছে এমন সব ইনজুরী যার কারনে শরীরের স্থায়ী ক্ষতিসাধন হয়ে থাকে। অর্থাৎ পঙ্গুত্ব। আর Life Threatening Injury হলে বুঝে নিতে হবে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
সবই বুঝলাম। কিন্তু এতবড় সর্বনাশ হয়েছে ক্রাইম করতে গিয়ে। দুজনই অপরাধী। হয়তো গ্যাং মেম্বারস্। পরে জানা যাবে। অস্ত্র নিয়ে একে অন্যকে মারতে গিয়ে আহত হয়ে এখন ধরা খেয়েছে পুলিশের হাতে। আর যত ঝামেলা হচ্ছে আমাদের। সেই দুপুর তিনটায় শেষ করে বাসায় যাবো আর এখন মধ্যরাত পেরিয়ে গেছে। কখন ফিরবো কে জানে?
আসতুন বেইদান (Astun Beydaan) ফ্রম সাউথ লন্ডন। হুম্ নদীর ওই পাড়ে থাকে। ডাক্তারের মাধ্যমে আসামীর নাম এবং ঠিকানা জানতে পারলাম। আমাদের সে তার নাম পর্যন্ত বলেনি। তার ডান হাতের বুড়ো আঙ্গুল ছাড়া আর সব আঙ্গুলের টেনডন কেটে গেছে। এটা রিপেয়ার করা প্রায় অসম্ভব। এখন থেকে ডান হাতে বজ্রমুষ্ঠি হবেনা, কোন ভার বহন করতে পারবে না। এরপর পাঠানো হল এক্স রে করার জন্য। সেখানে আরো ঘন্টাখানেক অপেক্ষা। এক্সরে করে আবার ওয়েটিং রুমে অপেক্ষা। এরকম অপেক্ষা আর অপেক্ষার খেলা শেষে ফাইনাল ট্রিটমেন্ট হতে হতে রাত একটা বাজলো। ফাইনাল ট্রিটমেন্ট বলতে হাতে ভালোমত ব্যান্ডেজ করে ডাক্তার ডিসচার্জ সার্টিফিকেট দিয়ে দিলো। আসতুন কে নিয়ে পুলিশ স্টেশানের কাস্টিডতে এলাম রাত দুটোয়।
কাস্টডিতে আবার হ্যান্ডওভার করতে হয় কাস্টডি সার্জেন্ট এর কাছে। ছুরিওয়ালা আসামীকে সেল এ পাঠানোর আগে তার গায়ের জামা, জুতা সব খুলে কাস্টডি থেকে ড্রেস আর জুতা দেওয়া হল, ব্ল্যাংকেট আর বালিশ তো আছেই। তারপর গরম গরম খাবার। কি রাজকীয় ব্যাবস্থা। আসতুন এর গায়ের সব জামা, প্যান্ট, জুতা, মোজা সবকিছু সিজ করা হল। যেহেতু সবকিছুতে রক্ত লেগে আছে এগুলোর ফরেনসিক টেস্ট করা হবে। কাস্টডিতে ফিংগার স্ক্যান করে জানা গেলো ওর নাম আসতুন নয়। ঠিকানাও ভুল। ওর নাম আব্বাস আবদুল্লাহি। খুন, হত্যাচেষ্টা, কিডন্যাপ এবং টর্চারের রেকর্ড আছে। জেল খেটেছে দুইবার তবে ওয়ান্টেড (Wanted) লিস্টে তার নাম নেই। যাই হোক, আসামীকে কাস্টডিতে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের কাজ শেষ।
সব পেপারওয়ার্ক শেষ করে পুলিশ স্টেশনের পেছনের কার পার্কে অপেক্ষা করছি। যে কোন একটা ডিউটি কারে করে বাসায় পৌঁছে দেবে। আন্ডারগ্রাউন্ড বন্ধ হয়ে গেছে। তখনো আন্ডারগ্রাউন্ডে নাইট সার্ভিস শুরু হয় নি। নাইট বাসে কতক্ষন লাগবে কে জানে? গভীর রাতে কলিগদের পুলিশ কারে বাড়ী পৌঁছে দেওয়া হয়, এটা কোন নিয়ম নয় তবে পুরোনো প্রথা।
বাসার সামনে যখন নামলাম তখন দেখি আকাশে একদম পরিষ্কার। দিনেরবেলার বৃষ্টিতে ধুয়ে ঘরবাড়ি গাছপালা সব চকচক করছে। বিশাল চাঁদের আলোয় টেমস নদীর পানিগুলো ঝলমল করছে। সামনে আমার উঁচু দালান। পেছনে নদী আর গভীর নিরবতা।
ঘড়ি দেখলাম,
সাড়ে চারটা। দুঘন্টা পর সূর্য্য উঠবে।
© ২০১৮ সকল সত্ব লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত